বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশালে অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে মাঠে কঠোর অবস্থানে স্টিমারঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ  ঝালকাঠি‑১ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থী তসলিম খান বরিশালে আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য, তদন্তের আশ্বাস সিভিল সার্জনের হিজলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অনিয়মের অভিযোগ, নেপথ্যে শিক্ষা কর্মকর্তা জলবায়ু কর্মী সোহানকে নিশানা করে অপ-প্রচার বরিশালের শ্রেষ্ঠ ওসি হলেন একে আজাদ বরিশালে তালাশ বিডি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন বাকেরগঞ্জে বিএনপির ৩১ দফা প্রচারে মিজান মোল্লার মোটর সাইকেল শোডাউন বরিশাল নগরীতে সিসা দূষণ প্রতিরোধে র‍্যালি-মানববন্ধন বরিশালে রাজপথের সাহসী ছাত্রদল নেতা ফেরদৌস 
ভোলার অগ্রণী ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ বরপুত্র ফরিদ এখনো বহাল তবিয়তে!

ভোলার অগ্রণী ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ বরপুত্র ফরিদ এখনো বহাল তবিয়তে!

নিজস্ব প্রতিবেদক::ভোলা জেলার অগ্রণী ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডো শাখায় চলছে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ। এসব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এস এম ফরিদ ও প্রিন্সিপাল অফিসার এ আর এম ইউসুফ।

 

দীর্ঘদিন ধরে ফরিদ ও ইউসুফ ভোলা অঞ্চলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি চালিয়ে গেলেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। অর্থ কেলেঙ্কারি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ।

 

ইসলামিক উইন্ডোতে যোগদানের পর থেকেই এস এম ফরিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, ঘুষ গ্রহণ ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ ওঠে। গ্রাহকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা, ঋণ অনুমোদনে ঘুষ নেওয়াসহ এসব অভিযোগ তার পিছু ছাড়েনি।

 

 

২০১৭ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ফরিদ ভোলার অগ্রণী ব্যাংক বোরহানউদ্দিন শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে পটুয়াখালী শাখায় বদলি করা হয়।

 

কিন্তু সেখানেও ঘুষ ও অনিয়ম অব্যাহত রাখেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে—অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন লোন ফাইলে স্বাক্ষর করতেন এবং ২০১৮ সালে এক অসাধু নির্বাহীর সহযোগিতায় প্রধান কার্যালয়ের অডিট ডিভিশনে পদায়ন পান।

 

 

অডিট বিভাগে গিয়েও ফরিদের অনিয়ম থেমে থাকেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন শাখায় অডিটের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করতেন।

 

অবশেষে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি হলেও প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় তিনি আবারও মাঠপর্যায়ে ফিরে আসেন।

 

 

 

ভোলায় ফেরার গল্প: নিয়ম ভেঙে পুনরায় পদায়ন ২০২০ সালে বরিশাল সার্কেলের কয়েকজন কর্মকর্তার তৎপরতায় ফরিদকে আবারও ভোলার কালিনাথ রায়ের বাজার শাখায় ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করা হয়—যা ব্যাংকের নীতিমালা পরিপন্থী।

 

এ সময় তিনি ১০% ঘুষের বিনিময়ে ঋণ বিতরণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষের টাকা দিয়ে তিনি ভোলা সদরে প্রায় ৮ শতাংশ জমিতে চারতলা ফাউন্ডেশনবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের জন্য তিনি ব্যাংক লোন নিয়েছিলেন, তবে নির্ধারিত তলা সম্পন্ন না করেও অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে তা অন্যত্র ব্যবহার করেন।

 

 

এছাড়া, তার নামে ও স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পদ ও একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে।

 

 

 

ব্যক্তিগত জীবনে কলঙ্ক

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদ তজুমদ্দিন উপজেলার এক দরিদ্র মাঝি পরিবারের সন্তান।

 

কর্মজীবনে ক্ষমতা ও অর্থের জোরে তিনি হয়ে ওঠেন ভোলার “বরপুত্র”। তবে তার ব্যক্তিজীবনও বিতর্কে জর্জরিত — প্রথম স্ত্রীর আত্মহত্যার পেছনে পরকীয়ার সম্পর্ক থাকার অভিযোগও রয়েছে।

 

সহযোগী ইউসুফের অনিয়ম:

 

অগ্রণী ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা এ আর এম ইউসুফ-এর বিরুদ্ধেও রয়েছে নারী কেলেঙ্কারি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ।

 

এক পর্যায়ে নারীসহ ধরা পড়ায় তাকে চরফ্যাশন শাখায় বদলি করা হয়েছিল, কিন্তু রহস্যজনকভাবে পুনরায় ভোলা শাখায় ফিরিয়ে আনা হয়।

 

২০১৬ সালে ফরিদের সঙ্গে মিলে প্রায় ২ লাখ টাকার স্ট্যাম্প জালিয়াতির অভিযোগেও তার নাম উঠে আসে, যা তৎকালীন জোনাল হেডের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

 

বর্তমানে তারা দুজন মিলে গ্রাহকদের হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

ঋণ বিতরণে অনিয়মের নজির:

সূত্রে জানা গেছে, ইসলামিক উইন্ডোর মাধ্যমে কিছু ব্যবসায়ীকে অস্বাভাবিকভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে।

 

যেমন,মেসার্স আল আমিন এন্টারপ্রাইজ: ১০ লাখ থেকে ২৮ লাখ টাকা (২.৮ গুণ বৃদ্ধি)

 

মেসার্স সাবিহা ডেইরি ফার্ম: ১৫ লাখ থেকে ৩৫ লাখ টাকা (২.৩৩ গুণ বৃদ্ধি)

 

মেসার্স মেঘনা সল্ট: ২৮ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা

 

এসব প্রতিষ্ঠানের দোকানে পর্যাপ্ত মালামাল না থাকলেও, ঘুষের বিনিময়ে লোন অনুমোদন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

 

অঞ্চল প্রধানের নীরব ভূমিকা!

অভিযোগ রয়েছে ফরিদ ও ইউসুফের প্রভাবের ভোলা অঞ্চলের প্রধান গণেশ চন্দ্র দেবনাথ অসহায়, তিনি  অভিযোগ জানার পরও ফাইলে স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয়ে ভোলা অঞ্চলের প্রধান গণেশ চন্দ্রকে মোবাইল করা হলে তিনি জানান, এস এম ফরিদের বদলির অর্ডার হয়নি, তিনি যদি সাংবাদিকদের কাছে ভোলা থেকে ৫ দিন আগে বদলি হয়ে ঢাকায় এসেছেন বলে থাকেন এটা মিথ্যা বছেন। এবাং গুরুতর অন্যায় করেছেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তার দুর্নীতির নিউজ বিভিন্ন অনলাইন পোটাল’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ায় তাকে ঢাকা হেড অফিসে ডেকেছেন। সম্ভবত খুব তাড়াতাড়ি তার বদলির অর্ডার হতেও পারে।

 

জনমনে প্রশ্ন:

অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারি ও ঘুষ বাণিজ্যের এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এস এম ফরিদ ও এ আর এম ইউসুফ কীভাবে এখনও ভোলায় বহাল তবিয়তে?

 

তাদের “খুটির জোর” কোথায়—এই প্রশ্ন ঘুরছে গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের মুখে। ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে।

 

ব্যাংক কর্মকর্তাদের নীরবতা:

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংক ভোলা ইসলামিক উইন্ডোর ম্যানেজার এস এম ফরিদকে কল দেয়া হলে তিনি জানান আমার পাঁচ দিন আগে ঢাকাতে বদলি হয়েছে বলে ফোন কেটে দেয়।

 

প্রিন্সিপাল অফিসার এ আর এম ইউসুফ ও অঞ্চল প্রধান গণেশ চন্দ্র দেবনাথের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন ...




© All rights reserved DailyAjkerSundarban